বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

মিলাদ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভ্রান্ত ধারনা




বাংলাদেশে মিলাদের সাথে পরিচিত নয় এমন লোকজন নেই বললেই চলে। এবং এই নিয়ে আমাদের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি রয়েছে। কেউ এটাকে জাতিজ বলে আবার কেউ এটাকে নাজায়িজ বলে। আজ আমি এ সম্পর্কে সামান্য কিছু আলোচনা করব।

মিলাদ এর শাব্দিক অর্থ হল জন্ম। মিলাদুন্নবী মাহফিল এর উদ্দেশ্য হল হুজুর সাঃ এর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা। মিলাদের উদ্দেশ্য এটাই হলে তবে হুজুর সাঃ এর জীবনী আলোচনা করে এবং এর শেষে দরুদ ও দোয়া করে নিলে তবে মিলাদ করা জায়িজ আছে।

কিন্তু আমাদের দেশে মিলাদ ও কিয়াম সাধারনত যে নিয়মে করা হয় এবং আজগুবি কবিতা ''ইয়ানবী সালামু আলাইকা'' ধরনের শাব্দিক ও অর্থ গত ভুল দরুদ পড়া হয় তা আপত্তিকর ও কুরান হাদিসের নীতি বহির্ভুত।

৬০৪ হিজরীতে ফাসিক বাদশাহ আবু সাঈদ মুযাফফরুদ্দীন , আবুল খাত্তাব ইবনে দিহইয়া নামক জৈনক দরবারী আলেম দ্বারা মিলাদ মাহফিলের ব্যাবস্থা করেন।
আল্লামা আব্দুর রহমান রহঃ প্রচলিত মিলাদ কে বিদয়াত বলেন। খোলাফায়ে রাশেদিন , সাহাবাগন রাঃ আইম্মায়ে মুজতাহিদগন তা করেন নি।(প্রমান আশশিরাতুল ইলাহিয়া ২৫৩ পৃ)
আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মদ মিসরী রহঃ লিখেন মাযহাব চারের ইমামগন মিলাদ মাহফিলের জঘন্যতার উপরে একমত পোষন করেন। (প্রমানঃ রাহে সুন্নাত ২৫৩ পৃ)
''যদি কেউ আমার এই দ্বিনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করতঃ অনুপ্রবেশ করায় তাহলে সে কাজ হবে প্রত্যাখ্যাত। কিছুতেই তা গ্রাহ্য হবেনা'' (বুখারী ও মুসলিমঃ মিশকাত শরীফ ২৭ পৃ)
উল্লেখ্য মিলাদে কিয়াম করা শিরক ও নাজায়িজ।
তবে প্রচলিত পন্থা ছাড়া কেউ মিলাদ পড়াতে চাইলে নিয়ম এই যে, কোন একজন হক্কানী আলেম রসুল সাঃ এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দরুদ পড়ার ফযীলত বলবেন এবং সবাই মহব্বতের সহিত দরুদ পড়বে। পরিশেষে আলেম সাহেব সবাই কে নিয়ে দোয়া করবেন।
(প্রমানঃ মিশকাত ২৭, ৪০৩, ওয়াফ্যাতুল আয়ান ৪ঃ১১৭ইতেসাম ১;১১৪, মজলিসে আবরার ২১৩ ফাতয়াওয়ায়ে রাহিমীয়া ২;২৮৩মুসলিম শরীফ ২;৭৭, আবু দাউদ শরীফ ২;৭১০)

আমার এবং হক্কানী আলেমদের মতঃ
ইয়া নবী সালামু আলাইকা- এখানে যে "ইয়া" শব্দটা বলা হয় সেটা তখনি বলা হয় যখন কেউ উপস্থিত থাকে কিন্তু নবী করিম (সাঃ) এর সাথে এই ইয়া বলে বেদাতিরা বেয়াদবি করে। কারন নবী (সাঃ) কে তারা হাজির নাজির বলে। হতচ আল্লাহ ছাড়া কেউই হাজির নাজির নয়। রাসূল (সাঃ) এর কি এত সম্মান কম (নাউযুবিল্লাহ্‌) যে ওনি সৌদি থেকে মিলাদ শোনার জন্য বাংলাদেশে আসবেন?

আর যারা কিয়াম করে, তারা তাদের কিয়ামের অল্প সময় শুধু দাঁড়িয়ে থাকে আর বাকি সময় বসে থাকে। রাসূল কে সম্মান জানাতে হলে তো সারাক্ষন দাঁড়িয়ে থাকত। তাইনা?

যাদের সামান্য জ্ঞান বুদ্ধি আছে তারা এইসব পাগলামী করবে না।
পাগলেরও তো একটা কালার আছে।

দাজ্জালের কাহীনি

দাজ্জালের ফেতনা ও তার অনুসারিদের বর্ণনা

                                  দাজ্জালের ফেতনার কিছু নমুনা।

নমুনা-১ঃ হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জালের সাথে স্বরচিত জান্নাত-জাহান্নাম থাকবে। সুতরাং তার জাহান্নাম হবে প্রকৃত জান্নাত এবং জান্নাত হবে প্রকৃত জাহান্নাম।-” (মুসলিম) অপর বর্ণনায়- “দাজ্জালের সাথে পানি এবং আগুন থাকবে। সুতরাং তার পানি হবে প্রকৃত আগুন এবং আগুন হবে ঠাণ্ডা পানি।-” (বুখারী-মুসলিম) আরো বলেন- “আমি ভাল করেই জানি, দাজ্জালের সাথে কি থাকবে। তার সাথে দু- টি নদী থাকবে। দেখতে একটিকে সাদা পানি এবং অপরটিকে জ্বলন্ত আগুনের মত মনে হবে। তোমরা যদি দাজ্জালকে পেয়ে যাও, তবে তার আগুনে ঝাপ দিয়ে দিও!!” (মুসলিম) অপর বর্ণনায়- “চোখ বন্ধ করে আগুনের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে পান করতে থেকো! কারণ, সেটি ঠাণ্ডা পানি।-” (মুসলিম)

নমুনা-2  নাওয়াছ বিন ছামআন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল একদল লোকের কাছে এসে প্রভুত্বের দাবী করবে। লোকেরা তার দাবী মেনে নিলে দাজ্জাল আসমানকে বৃষ্টি দিতে বলবে, আসমান বৃষ্টি বর্ষণ করবে। জমিকে ফসল দিতে বলবে, জমি ফসল উদগত করবে। তাদের গবাদিপশু চারণভূমি থেকে মোটাতাজা এবং দুধে পূর্ণ হয়ে ফিরবে। অতঃপর দাজ্জাল অপর একদল লোকের কাছে এসে প্রভুত্বের দাবী করবে। লোকেরা তা প্রত্যাখ্যান করলে তাদের জমিগুলো অনুর্বর হয়ে যাবে, গবাদিপশু-গুলি মরে যাবে। দাজ্জাল মৃত জমিতে গিয়ে বলবে- হে ভূমি! তুমি তোমার গুপ্ত রত্ন-ভাণ্ডার প্রকাশ করে দাও! তখন মৌমাছির ঝাপের মত সকল রত্ন-ভাণ্ডার বের হয়ে আসবে।-” (মুসলিম)

নমুনা-৩ দাজ্জাল এক বেদুইনের কাছে এসে বলবে- “ওহে বেদুইন! আমি যদি তোমার মৃত পিতা- মাতাকে জীবিত করে দিই, তবে আমাকে প্রভু বলে মেনে নিতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে? বেদুইন বলবে- না!! অতঃপর দু-জন শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধারণ করে তাকে বলবে- ওহে বৎস! একে অনুসরণ কর! সে তোমার প্রভু!!” (মুস্তাদরাকে হাকিম)

নমুনা-৪ দাজ্জাল এক তরুণকে ডেকে এনে তরবারী দিয়ে দু’- টুকরা করে দেবে। মানুষকে বলবে- ওহে লোকসকল! দেখ, আমার এই হতভাগা বান্দাকে আমি মরণ দিয়েছি, আবার জীবিত করে দেব, এরপর-ও সে মনে করবে, আমি তার প্রভু নই!! অতঃপর দাজ্জাল জীবিত হওয়ার আদেশ দিলে তরুণ জীবিত দাড়িয়ে যাবে। অথচ দাজ্জাল নয়; আল্লাহ-ই তাকে জীবিত করেছেন। দাজ্জাল বলবে- তোমার প্রভু কে? তরুণ বলবে- আমার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ! আর তুই হচ্ছিস আল্লাহর শত্রু দাজ্জাল!

                                         দাজ্জালের অনুসারী কারা?

কোন সন্দেহ নেই- অলৌকিক সব ক্ষমতা এবং জাদুময় কর্মকাণ্ডের দরুন দাজ্জাল প্রচুর লোককে অনুসারী বানিয়ে ফেলবে। কেউ লোভে, আর কেউ আক্রমণের ভয়ে তার দলে যোগ দেবে। আবার কেউ কেউ ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে তার বাহিনীতে শামিল হবেঃ ১) ইহুদী সম্প্রদায়ঃ আনাছ বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “আসফাহান অঞ্চলের সত্তর হাজার চাদর পরিহিত ইহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে।-” (মুসলিম) রাজধানী তেহরান থেকে ৩৪০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত মধ্য ইরানের প্রসিদ্ধ একটি প্রদেশ আসফাহান। সরকারী গণনানুযায়ী সেখানে প্রায় ৩০ হাজার ইহুদী বাস করে থাকে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “সত্তর হাজার অনুসারী নিয়ে দাজ্জাল খোয ও কিরমান অঞ্চলে অবতরণ করবে। তাদের চেহারা স্ফীত বর্মের ন্যায় দেখাবে।-” (মুসনাদে আহমদ) খোযঃ- পশ্চিম ইরানের একটি এলাকার নাম। বর্তমানে একে খোযিস্তান বলা হয়। কিরমানঃ- দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের প্রসিদ্ধ একটি নগরী। স্ফীত ঢালঃ- অর্থাৎ ক্ষুদ্র মাথা, সাদা ও গোলাকার চেহারা বিশিষ্ট। গালের মাংস কিছুটা উঁচু। এককথায়- তাদের চেহারা মোটা ও প্রশস্ত হবে।

                 দাজ্জালের অনুসারী অধিকাংশ-ই ইহুদী, কেন?

১) কারণ, ইহুদীদের ধর্মীয় বিশ্বাস- দাজ্জাল হচ্ছে তাদের প্রতীক্ষিত মাছীহা। ইহুদীরা মনে করে, আল্লাহ পাক তাদের জন্য দাউদ আ.-এর বংশের একজন বাদশা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সে ইহুদীদের বিস্তৃত রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। – মিছিয়াহ- বলে যাকে তাদের গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদীদের ধর্মীয় প্রথায় -দাজ্জালের তড়িৎ আগমন প্রত্যাশায় বিশেষ উপাসনা করা হয়। ইহুদীদের পাসোভার উৎসবের রাতে দাজ্জালের কল্যাণ কামনায় বিশেষ প্রার্থণা করা হয়। ইহুদী ধর্মশাস্ত্র তালমূদে বর্ণিত হয়েছেঃ “মাছীহের আগমনকালে খাদ্য শস্য এবং পশমের পোশাকে বিশ্ব ভরে যাবে। সেদিন যবের একটি দানা গাভীর বৃহৎ স্তন সদৃশ হবে। সেদিন বিশ্বময় ইহুদী কর্তৃত্ব ফিরে আসবে। সবাই মাছীহকে অনুসরণ করবে। সেদিন প্রত্যেক ইহুদী’র ২৮০০ (দু-হাজার আটশত) করে সেবক থাকবে। জল-স্থল সর্বত্র তার-ই নেতৃত্ব চলবে। তবে অনিষ্টদের শাসনব্যবস্থা সমাপ্ত হলে-ই মাছীহ’র আগমন হবে।”

২) কাফের ও মুনাফিক সম্প্রদায়ঃ আনাছ বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মক্কা-মদীনা ব্যতীত সকল শহরে-ই দাজ্জালের অপতৎপরতা ছড়িয়ে পড়বে। সেদিন শহরদ্বয়ের প্রতিটি সড়কে ফেরেশতাগণ নাঙ্গা-তলোয়ার হাতে পাহারায় থাকবেন। দাজ্জাল -ছাবখা প্রান্তরে এসে উপনীত হলে মদীনায় তিনটি ভূ-কম্পন অনুভূত হবে। ফলে সকল কাফের-মুনাফেক মদীনা থেকে বেরিয়ে দাজ্জালের দলে চলে যাবে।-” (বুখারী-মুসলিম)

৩) আরব বেদুইনঃ আবু উমামা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদিসে নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল বেদুইনের কাছে এসে বলবে- “ওহে বেদুইন! আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিই, তবে আমাকে প্রভু বলে মেনে নিতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে? বেদুইন বলবে- না!! অতঃপর দু’-জন শয়তান তার পিতা-মাতার রূপ ধরে তাকে বলবে- ওহে বৎস! একে অনুসরণ কর! সে তোমার প্রভু!!” (মুস্তাদরাকে হাকিম)

৪) স্থূল বর্ম সদৃশ স্ফীত চেহারা বিশিষ্ট সম্প্রদায়ঃ আবু বকর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “নিশ্চয় দাজ্জাল প্রাচ্যের খোরাছান এলাকা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে। স্থূল বর্ম সদৃশ স্ফীত চেহারা বিশিষ্ট লোকেরা তার অনুসারী হবে।-” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)

৫) নারী সম্প্রদায়ঃ নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল এসে ছাবখা’র মাররে ক্বানাত ভূমিতে অবতরণ করবে। অধিকাংশ নারী-ই তার কাছে চলে যাবে। আতঙ্কে মুমিন পুরুষ ঘরে গিয়ে মা, মেয়ে, বোন, চাচীকে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখবে।-” (মুসনাদে আহমদ)

                                    দাজ্জালের অবস্থানকালঃ

দাজ্জাল পৃথিবীতে কয়দিন অবস্থান করবে? প্রশ্নের উত্তরে নবী করীম সা. বলেছেন- চল্লিশদিন। প্রথম দিন এক বৎসর, দ্বিতীয় দিন এক মাস, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের ন্যায় হবে। হাদিসটি শুনার পর সাহাবায়ে কেরাম দীর্ঘ এই দিনগুলোতে নামায পড়ার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! দীর্ঘ এই দিনগুলোতে একদিনের নামায কি যথেষ্ট হবে ?! নবী করীম সা. বলেছিলেনঃ “না! বরং নামাযের জন্য তখন তোমরা সময় ঠিক করে নিও! (অর্থাৎ দীর্ঘ এক বৎসরের দিনে পূর্ণ এক বৎসরের নামায- ই আদায় করতে হবে, তবে এর জন্য সময় ঠিক করে নেয়া আমাদের দায়িত্ব)।

                    দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুক্তির উপায়:

উপায়-(1) মুখোমুখি অবস্থান থেকে দূরে থাকা। ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জালের আগমন সংবাদ পেলে তোমরা দূরে পালিয়ে যেয়ো! কারণ, নিজেকে মুমিন ভেবে অনেক মানুষ তার মুখোমুখি হবে, কিন্তু অলৌকিক কর্মকাণ্ড দেখে অসহায়ের মত তাকে অনুসরণ করে বসবে।-” (মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ) অর্থাৎ সবসময় দূরে অবস্থান করতে হবে, নিজেকে সাহসী ভেবে কাছে যাওয়ার দুঃসাহস করা যাবে না। উম্মে শারীক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জালের ভয়ে মানুষ সুদূর পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেবে।-” (মুসলিম) দাজ্জালের সময় ইমাম মাহদী থাকবেন, দামেস্কে তিনি মুসলমানদের নিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকবেন।

উপায়- (2) আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “যে ব্যক্তি দাজ্জালের আগুনে নিক্ষেপিত হয়, সে যেন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে।-” (ইবনে মাজা)

উপায়- (3) আল্লাহর সিফাতী নামসমূহ মুখস্ত করা দাজ্জাল হবে কানা। অথচ আল্লাহ কানা নন; বরং আল্লাহ পাক সকল ত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র।

উপায়- (4) সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করে নিয়মিত পাঠ করা। আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “যে ব্যক্তি সূরা কাহফ’-এর প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করে নিল, সে দাজ্জাল থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।-” (মুসলিম)

উপায়- (5) পূর্ণ সূরা কাহফ’ তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলা। আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “যে ব্যক্তি নির্ভুলভাবে সূরা কাহফ পাঠ করল। দাজ্জাল তাকে সামনে পেলেও কোন ক্ষতি করতে পারবে না।-” (মুস্তাদরাকে হাকিম)

উপায়- (6) হারামাইন তথা মক্কা-মদীনায় আশ্রয় নেয়া। কারণ, দাজ্জাল এলাকাদ্বয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

উপায়- (7) নামাযের শেষ বৈঠকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া পড়া। অর্থাৎ তাশাহুদে সালামের পূর্বক্ষণে হাদিসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দোয়া পড়াঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন আযাবি জাহান্নামি। ওয়ামিন আযাবিল ক্ববরি। ওয়ামিন আযাবিল মাহয়া ওয়াল মামাতি। ওয়ামিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জালি।” অনুবাদ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, জীবন-মৃত্যুর ফেতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি এবং দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারী- মুসলিম)

উপায়- (8) দাজ্জালের ফেতনাটি বেশি বেশি প্রচার করা। সা’ব বিন জুছামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল ততক্ষণ বের হবে না, যতক্ষণ না মানুষ তার আলোচনাকে ভুলে যায়।-” (মাজমায়ে যাওয়ায়েদ) অর্থাৎ কেউ তখন দাজ্জালের আলোচনা করবে না। ফেতনার আধিক্যের দরুন তার ব্যাপারটি মানুষ ভুলে যেতে বসবে।

                                     দাজ্জালের ঘাতক কে হবেন?

দাজ্জালের ঘাতক হবেন হযরত ঈসা (আ.) মাজমা বিন জারিয়া রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “ ঈসা বিন মারিয়াম দাজ্জালকে লুদ শহরের প্রধান ফটকের কাছে হত্যা করবেন।-” (তিরমিযী) আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “মুসলমান তখন যুদ্ধের জন্য কাতারবন্দি করতে থাকবে, এমন সময় ফজরের ইকামত-কালে ঈসা বিন মারিয়াম অবতরণ করবেন।-” অপর বর্ণনায়- “দামেস্কের পূর্ব- প্রান্তে সাদা মিনারের কাছে ঈসা বিন মারিয়াম দু-টি রঙিন চাদরে আবৃত হয়ে দু’জন ফেরেশতার কাঁধে ভর করে অবতরণ করবেন। মাথা নিচু করলে টপটপ পানি পড়বে। আবার উঁচু করলে কেশগুচ্ছ সুশোভিত মতি-সদৃশ দৃশ্যমান হবে। কোন কাফেরের শরীরে তাঁর নিশ্বাস পড়া মাত্রই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।” (যতদূর তাঁর দৃষ্টি যাবে, ততদূর তাঁর নিশ্বাস গিয়ে পৌঁছুবে। অর্থাৎ ঈসা আ.-এর দৃষ্টির মাধ্যমে-ই অর্ধেক শত্রুবাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে) পূর্বেই আলোচিত হয়েছে যে, মুসলমানগণ ফজরের নামাযের প্রস্তুতি নিবেন। সেনাপতি ইমাম মাহদী নামাযের ইমামতির জন্য সামনে এগিয়ে যাবেন। এমন সময় ঈসা নবীর অবতরণ হবে। ঈসা আ.কে দেখে ইমাম মাহদী পেছনে ফিরে আসতে চাইলে কাঁধে হাত রেখে বলবেন- তুমি-ই নামায পড়াও! তোমার জন্যই ইকামত দেয়া হয়েছে (উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এ এক বিরাট সম্মাননা যে, এত বড় নবী সাধারণ একজন উম্মতীর পেছনে নামায আদায় করছেন) নামায শেষে বলবেন- দরজা খোল! পেছনে দাজ্জাল এবং সত্তর হাজার ইহুদী অত্যাধুনিক রণসাজে সজ্জিত থাকবে। ঈসা আ.কে দেখামাত্রই দাজ্জাল – পানিতে লবণের ন্যায় গলে যাবে। পলায়নের উদ্দেশ্যে দৌড় দেবে। ঈসা আ. তার পিছু ধাওয়া করে লুদ এলাকার প্রধান ফটকের কাছে তাকে পেয়ে যাবেন (লুদ হচ্ছে বাইতুল মাকদিসের সন্নিকটে প্রসিদ্ধ এলাকা, ইহুদীরা সেখানে অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে) সেখানেই তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। ফিরে এসে তিনি বর্ষায় লেগে থাকা দাজ্জালের রক্ত মুসলমানদের দেখাবেন। অতঃপর ইহুদীদের ধ্বংস-ডংকা বেজে উঠবে। মুসলমান তাদের পিছু ধাওয়া করবে। প্রতিটি বস্তু সেদিন মুসলমানকে ডেকে বলবে- ওহে মুসলিম! আমার পেছনে ইহুদী আত্মগোপন করেছে! এদিকে এসো! একে হত্যা কর! তবে গারকাদ বৃক্ষ মুসলমানদের ডাকবে না, কারণ তা ইহুদীদের রোপিত বৃক্ষ। অতঃপর ফিরে এসে ঈসা আ. মুসলমানদের চোখের অশ্রু মুছে দেবেন। তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনাতে থাকবেন- এমন সময় আল্লাহ ওহী নাযিল করবেন- ওহে ঈসা! এমন কিছু বান্দাকে আমি দুনিয়াতে প্রকাশ করতে যাচ্ছি, যাদের মুকাবেলা করার শক্তি তোমাদের নেই। সুতরাং মুমিনদেরকে নিয়ে তুমি তূর পর্বতে চলে যাও!! অর্থাৎ ইয়াজূজ-মাজূজ।

দাজ্জালের বিরুদ্ধে সবচে’ কঠোর বনী তামীম গোত্রঃ

আবু হুরায়রা রা. বলেন- “নবী করীম সা.এর মুখ থেকে শুনা তিনটি কারণে বনী তামীমকে আমি অত্যন্ত ভালবাসিঃ

১) তারা দাজ্জালের বিরুদ্ধে সবচে’ কঠোর হবে।

২) তাদের সাদাকা আসলে নবীজী বলতেন- এটি আমার (প্রিয়) জাতির সাদাকা।

৩) বনী তামিমের এক মহিলা দাসী আয়েশা রা.-এর অধীনে ছিল।হে আয়েশা! একে স্বাধীন করে দাও। সে বনী ইসমাইলের মধ্য থেকে। (বুখারী,মুসলিম)

অবশেষে দুটি কথা।

1) আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল থেকেও মারাত্মক একটি বিষয় নিয়ে আমি তোমাদের উপর শঙ্কিত- সেটি হচ্ছে গোপন শিরক। মানুষ নামাযে দাড়াবে। প্রিয় মানুষটি তাকিয়ে আছে ভেবে সুন্দর করে নামায পড়বে।-” (মুসনাদে আহমদ) রিয়া (আত্মপ্রদর্শন) ঘৃণিত একটি বিষয়। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে বা প্রশংসা কুড়ানোর আশায় কোন কাজ করাকে-ই রিয়া বলা হয়। আত্মপ্রদর্শনকারীকে কাল কেয়ামতে বলা হবে- যাও! যাকে দেখানোর জন্য দুনিয়াতে এবাদত করতে! তার কাছে যাও! দেখ- প্রতিদান পাও কিনা..!!?? (মুসনাদে আহমদ)

2) আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেন- “দাজ্জাল ছাড়া-ও যে বিষয়টি নিয়ে আমি তোমাদের উপর বেশি শঙ্কিত, সেটি হচ্ছে- পথভ্রষ্টকারী নেতৃবর্গ।-” (মুসনাদে আহমদ) নবীজী ঠিক-ই বলেছেন, সমাজের তৃণমূল স্তর যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে অধীনস্থরা তো এমনিতেই দুশ্চরিত্র হয়ে যাবে। হাদিসে নেতৃবর্গ বলতে সমাজের সকল স্তরের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উদ্দেশ্য।